বৈষ্ণব নগর

আজও সেই তিমিরেই ভাঙন পীড়িতরা

 

ভোট আসে ভোট যায়, মিলে ডালি ভরা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয় ঠিক কতটা ? এমনই এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে ভাঙনে সর্বহারাদের গল্পে।

    মালদা জেলার জ্বলন্ত সমস্যা গঙ্গা ভাঙন। ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে বৈষ্ণবনগর এলাকার চিনাবাজার, সরকার টোলা, বিননগর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। গঙ্গা গ্রাস করেছে ঐ এলাকার মানুষদের ঘর বাড়ি, জমি-জমা সব। দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী ভাবে কোনোমতে বসবাস করছে সর্বহারা পরিবারগুলি। তাদের এই অসহায় জীবন যাপনের মাঝে পার হয়েছে বেশ কয়েকটি নির্বাচন। প্রতিবারই তাদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন ঘটেনি আজও। সরকারের তরফ থেকে মেলেনি জমির পাট্টা বা কোনোরূপ আর্থিক সাহায্য বলে অভিযোগ। ফলে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলি।

আবারও আসছে ভোট, ভিটেমাটি হারাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভোটপ্রার্থীরা, মিলছে আবারও প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এবারে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ওই ভাঙন পীড়িতরা। ভোট শেষে কেউ তাঁদের খোঁজ খবর রাখে না বলে আক্ষেপ করেন তাঁরা।

 

    ভাঙন পীড়িত বাস্তুহারাদের নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। বৈষ্ণবনগরের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক স্বাধীন সরকার বলেন, ২০১৬ সাল থেকে হাজারেরও বেশি পরিবার গঙ্গা ভাঙনে বাড়িঘর সবকিছু হারিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রতি রাজ্য সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে অভিযোগ প্রাক্তন বিধায়কের।

 

    প্রাক্তন বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেন মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি বাবলা সরকার। তিনি জানান, মালদার বড় সমস্যা গঙ্গা ভাঙন রোধে নিষ্ক্রিয় কেন্দ্র সরকার। বৈষ্ণবনগরের প্রাক্তন বিধায়ক বিজেপির, কেন্দ্রেও বিজেপি সরকার, তবুও কেন সমস্যার সমাধান করতে পারেননি বলে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল নেতা বাবলা সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পুনর্বাসনের জন্য অনেক সরকারি জমি ভূমি হারাদের দান করেছে বলে দাবী তাঁর।

 

    দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে বৈষ্ণবনগর। এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে দীর্ঘদিন সাংসদ হিসেবে ছিলেন কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরী। কেন্দ্রে UPA সরকার থাকাকালীনও ডালুবাবুই ছিলেন ওই এলাকার সাংসদ, ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও। এই ভাঙন রোধে বা সর্বহারাদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে কংগ্রেস সাংসদের ভূমিকাই বা কি উঠছে প্রশ্ন। দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের এবারের কংগ্রেস প্রার্থী ডালুপুত্র ঈশা খান চৌধুরী জানান, এই বিষয়ে বহুবার রাজ্যসরকার ও জেলাশাসককে জানানো হয়েছে। সর্বহারা পরিবারগুলির পুনর্বাসনের দাবীও করেন কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খান।

 

    গঙ্গা ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলছে মালদার মাটি, পাল্টে ফেলছে মানচিত্র। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও উদাসীন সব সরকারই। ভোটের সময় সমস্যা সমাধানের কথা দিলেও, ভোট শেষে তার বাস্তবায়ন ঘটা যেন অলীক কল্পনা মাত্র। এবারের লোকসভা নির্বাচন শেষে আদৌ কি মিলবে আস্তানা? নাকি সেই তিমিরেই থেকে যাবে ভিটেমাটি হারা পরিবারগুলি? আপাতত এই উত্তরের অপেক্ষাতেই দিন কাটাচ্ছে ভাঙনপীড়িতরা।